Bankim Chandra Chattapadhyaya / বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৩৮-৯৪) একক প্রয়াসেই বাংলা উপন্যাস সকল অপরিণতির চিহ্ন মুছে ফেলে। তাঁর রচনাতেই বাঙালি পাঠক রোমান্সের বর্ণবহুল জীবনের সন্ধান লাভ করে এবং বাঙালির একঘেয়ে সামাজিক জীবনের মধ্যেও উপভোগ্য গল্পরসের স্বাদ আবিষ্কার করে। দুটি বড়ো গল্প বাদ দিলে বঙ্কিমচন্দ্রের কথাসাহিত্যের সংখ্যা বারোটি। তার মধ্যে আটটিই ইতিহাস-আশ্রিত রোমান্স, চারটি সামাজিক উপন্যাস। পরের বর্গের রচনার মধ্যে তো বটেই, বঙ্কিমচন্দ্রের কথাসাহিত্যে কৃষ্ণকান্তের উইলের (১৮৭৮) শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত।

পূর্বপ্রকাশিত বিষবৃক্ষের (১৮৭৩) সঙ্গে কৃষ্ণকান্তের উইলের সাদৃশ্য আছে। স্ত্রী-বর্তমানে বিধবা নারীর প্রতি পুরুষের আসক্তি উভয় উপন্যাসেই কাহিনির মূল। বিষবৃক্ষে কুন্দনন্দিনীর সঙ্গে স্বামী নগেন্দ্রনাথের বিয়ে দিয়ে সূর্য্যমুখী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়; নগেন্দ্র নাথ তখন সূর্য্যমুখীকে লাভ করতে ব্যাকুল হয়ে পড়ে এবং কুন্দকে উপেক্ষা করে; সূর্য্যমুখভী ফিলে এলে কুন্দ বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেÑসে-বিষ অবশ্য তার হাতে আসে একটি শাখা-কাহিনির জটিল আবর্ত থেকে; নগেন্দ্র ও সূর্য্যমুখী পুনর্মিলিত হয়। মনে হয়, এই পরিণতির ঔচিত্য সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের সন্দেহ জেগেছিল। কৃষ্ণকান্তের উইলে রোহিনীর প্রতি গোবিন্দলালের দুর্নিবার আকর্ষণ; ভ্রমরের অভিমান; রোহিণীকে নিয়ে গোবিন্দলালের পলায়ন; গোবিন্দলালের ভ্রমরকে ফিরে পাওয়ার আকাক্সক্ষা; নিজের রূপের আকর্ষণ যাচাইয়ের প্রয়াস রোহিণীর; গোবিন্দলালের পিস্তলের গুলিতে তার মৃত্যু; অসুস্থ ভ্রমরের জীবনাবসান; গোবিন্দলালের সন্ন্যাসগ্রহণ এবং ভ্রমরাধিক ভ্রমরে নিজেকে সমর্পণ। দুটি কাহিনির পার্থক্য থেকে আমরা এটুকু বুঝতে পারি যে, এরকম পরিস্থিতিতে কোনো পুনর্মিলনের সম্ভাবনা থাকে না, সংশ্লিষ্ট সকলেরই জীবনে অনিবার্য ধ্বংস নেমে আসে।

Books by Bankim Chandra Chattapadhyaya / বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়