Sarat Chandra Chattopadhyay / শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

যাঁরা শ্রীকান্তকে (প্রথম পর্ব ১৯১৭, দ্বিতীয় পর্ব ১৯১৮, তৃতীয় পর্ব ১৯২৭ ও চতুর্থ পর্ব ১৯৩৩) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৭৬-১৯৩৮) শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে মনে করেন, তাঁরা খুব ভুল করেন না। উপন্যাসের নিবিড় সংহতি শ্রীকান্তে নেই। তবে শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মীর সূত্রে কাহিনির একধরনের ধারাবাহিকতা আছে। শাখা-কাহিনির রূপ ধরে শ্রীকান্তের খণ্ড খণ্ড অভিজ্ঞতার যে-বিবরণ এখানে একসূত্রে বাঁধার চেষ্টা আছে, তাতে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে ভাবসমৃদ্ধ অনুভূতির অভিব্যক্তি ঘটেছে। অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য, পর্যবেক্ষণের তীক্ষ্ণতা, ব্যাপক সহানুভূতি এবং প্রকাশের সরস ও সরল ভঙ্গি একে উপন্যাসের ঐশ্বর্যে সিক্ত করেছে। দ্বিতীয় পর্বে শ্রীকান্তের বর্মা-যাত্রা পর্যন্ত কাহিনির অপেক্ষাকৃত সন্নিবদ্ধ রুপ আমরা প্রত্যক্ষ করি। তারপর কাহিনি যত অগ্রসর হযেছে, ততই তার মধ্যে শিথিলতা এসেছে। এই শিথিলতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় চতুর্থ পর্বে। তারপরও শ্রীকান্তের ঘটনাবিন্যাস ও চরিত্রপরিকল্পনায় লেখকের একটি ছক আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। উপন্যাসের আগাগোড়াই শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মীর অধিষ্ঠান, তবে প্রতি পর্বে একজন অসাধারণ নারীচরিত্রের আবির্ভাব: প্রথম পর্বে অন্নদাদিদি, দ্বিতীয় পর্বে অভয়া, তৃতীয় পর্বে সুনন্দা ও চতুর্থ পর্বে কমললতা। প্রথম পর্বের ইন্দ্রনাথ ব্যতীত আর কোনো পুরুষ-চরিত্র কী কাহিনিতে কী শ্রীকান্ত বা রাজলক্ষ্মীর চিত্তে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি-না রোহিণী, না বজ্রানন্দ, না গহর। বরঞ্চ বঙ্কু বা রতন মাঝে মাঝে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাহিনিকে এগিয়ে নিতে অনেক সাহায্য করেছে।

Books by Sarat Chandra Chattopadhyay / শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়