প্যারিসের দিনরাত্রি
প্যারিস রুটে আমার সিট নম্বর ৬৭/এ। জানালার পাশে। আমার পাশের সিটে দুই মাতৃরূপিনী রমণী। একজন সারাক্ষণ বই পড়ছে, অন্যজন চটের উপর লাল সুতা দিয়ে নকশা বুনে চলেছে। জানালার বাইরে আকাশের নীচে পাহাড়ের পর পাহাড়, চূড়ায় চূড়ায় বরফ, পাহাড়ের মাঝখানে উপত্যকা, তাতে সুসজ্জিত মানব-বসতি, মাঝে মাঝে বিশালকায় হৃদ। হঠাৎ জানালার পাশে ভেসে উঠল চাঁদ, আধখানা চাঁদ। প্রবল রোদের মাঝে চাঁদ। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবু তো চাঁদ। মনে পড়ল পঁয়ত্রিশ বছর আগে লেখা নিজের কবিতা : আধখানা দ্বার বন্ধ ছিল আধখানা দ্বার খোলা, আধখানা এই হৃদয় ছিল তোমার জন্য তোলা; দিনদুপুরে স্বপ্ন কবাট হঠাৎ গেল খুলে সময় চেয়ে সময় নিলে পূর্ণ প্রেমের ভুলে। বিমান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিলো, আমরা প্যারিসের কাছাকাছি এসে গেছি, আপনারা সিট বেল্ট বেঁধে ফেলুন। আমি তার আগে আমার গায়ে কোট চড়াতে গেলাম। পাশের মহিলা আদর করে আমার গায়ে কোট পরিয়ে দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ইউ আর লাইক মাই মাদার। ভদ্রমহিলা ফরাসী ভাষা বোঝেন, ইংরেজী কম বোঝেন। তবু মনে হলো বুঝলেন আমার ভাষা, তিনি তৃপ্তির হাসি হাসলেন। পৃথিবীতে মায়ের আদর সর্বত্রই একই রকম। জগৎ ভরমিয়া দেখলাম একই মায়ের মুখ।