Syed Waliullah / সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্

পিতার কর্মসূত্রে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ (১৯২২-৭১) বাংলার অনেক মফসস্ল শহরে বাস করেছেন এবং পড়াশোনা করেছেন, তবে নিজের কর্মজীবনের প্রায় সবটাই কাটিয়েছেন নগরে: কলকাতা, ঢাকা, করাচি, নয়াদিল্লি, সিডনি, জাকার্তা, লন্ডন, বন ও প্যারিসে। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করেছিলেন এবং সেই সূত্রে বিভিন্ন দেশে পাকিস্তান দূতাবাসে নিয়োগলাভ এবং জীবনের শেষে ইউনেসকোর কর্মগ্রহণ। সাহিত্যচর্চার শুরু স্কুলজীবনেই, প্রথম প্রকাশিত রচনা ঢাকা কলেজ বার্ষিকীতে মুদ্রিত একটি ছোটোগল্প (১৯৪১)। কলকাতায় যাওয়ার পরে (১৯৪৩) সওগাত, মোহাম্মদী ও বুলবুলেই কেবল নয়, পূর্বাশা, অরণি, চতুরঙ্গ ও পরিচয়ে তাঁর রচনা প্রকাশিত হয়, নিজেও একটি স্বল্পায়ু ইংরেজি সাময়িকী প্রকাশ করেন। কলকাতায় তিনি কাজ করতেন স্টেটসম্যান পত্রিকায়, শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে, সুধীচন্দ্রনাথ দত্তের ঘনিষ্ঠতা এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্যের আনুকূল্যে লাভ করেন। ওয়ালীউল্লাহ্র সংকল্প ছিল মুসলমান সমাজ নিয়ে লেখা, বিশেষ করে সেই সমাজের যে-অংশ গ্রামাঞ্চলে বাস করে সেই অংশের কথা লেখা। তিনি তা-ই করেছেন, তবে কোনো সংকীর্ণ মনোভাবের দ্বারা চালিত হননি। তাই তাঁর সাহিত্যকর্মে আমরা সর্বজনীন মানুষকেই পাই, কখনো কখনো তারা বিশেষ দেশকালসমাজের ছাপ বহন করে মাত্র। তিনি বিশেষ করে মৃত্তিকাসংলগ্ন হন পঞ্চাশের মন্বন্তর দেখার পরে, এ-কথাও এ-প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বহুপ্রজ লেখক ছিলেন না। লেখার বিষয়ে সহজে তাঁর তুষ্টি হতো না। এক লেখা বহুবার মাজাঘষা করতেন। তাই আশ্চর্য নয় যে, তাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি দুটি গল্পগ্রন্থÑনয়নচারা (১৯৪৫, সঞ্জয় ভট্টাচার্যের আগ্রহে পূর্বাশা লিমিটেড থেকে প্রকাশিত), দুই তীর (১৯৬৫, আদমজী পুরস্কারে সম্মানিত); তিনটি উপন্যাসÑলালসালু (১৯৪৯, উপন্যাসের জন্যে লেখক যখন ১৯৬০ সালের বাঙলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন, তখনো এটিই ছিল তাঁর একমাত্র উপন্যাস), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪) ও কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮); এবং তিনটি নাট্যরচনাÑবহিপীর (১৯৬০, যদিও এর পা-ুলিপি ১৯৫৫ সালে লাভ করে সি ই এন পুরস্কার), তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৪) ও সুড়ঙ্গ (১৯৬৪)। লালসালুই তাঁকে সর্বাধিক খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা দিয়েছে; এর ফরাসি (১৯৬১) ও ইংরেজি (১৯৬৭) অনুবাদে যথাক্রমে প্যারিস লন্ডনে প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে বাংলাদেশ পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

Books by Syed Waliullah / সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্