মনোয়ারা ইলিয়াস ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে বিএ অনার্স পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বাংলা সাহিত্য পড়াশোনা করতে আসেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী হওয়ায় তখন তাঁর পক্ষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা সম্ভবপর হয়নি। ১৯৬৬ সালে বাংলায় এমএ পাস করেন কৃতিত্বের সঙ্গে; কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ না করে প্রবেশ করেন পারিবারিক জীবনে কিন্তু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল অপরিসীম। গড়ে তুলেছিলেন তাঁর প্রিয় গ্রন্থের পাঠশালা। কর্মাবকাশে তিনি পাঠ করেছেন উপন্যাস, কাব্য, নাটক ও প্রবন্ধ। আর আগ্রহ ছিল সমাজসেবায়Ñনারীকেন্দ্রিক সংস্থাই ছিল তাঁর বিনোদন আর কর্মক্ষেত্র।
মনোয়ারা ইলিয়াস বাংলায় প্রচলিত ইংরেজি শব্দের একটি বৃহৎ ভাণ্ডার গড়ে তোলেন। একজন ভাষাতাত্ত্বিকের সহযোগে এই অভিধান তিনি সম্পন্ন করেন অল্পদিনের মধ্যে।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটানোর অন্যতম দায় বর্তায় মানুষের অপরিমিত ভূমি অধিকারের লিপ্সায়। এই সত্যটি উপলব্ধি করেছিলেন বঙ্গদেশের একজন ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় শত বছর আগে প্রণীত আরণ্যক উপন্যাসটি তিনি পুনরায় তরুণ প্রজন্মের পাঠকদের সামনে উপস্থাপনের কাজ করেন। মূলের সাধুরীতিকে তিনি চলিতরীতিতে রূপান্তর করে গ্রন্থটির পাঠযোগ্যতা বৃদ্ধি করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসী ও অনভিবাসী কবিদের কবিতা অনুবাদে হাত দেন। দক্ষিণ এশিয়ার কবিতার এই সংকলন আমাদের অনুবাদ কবিতার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। কারণ আমাদের অনুবাদের ইতিহাসে ইংরেজি, ফরাসি এবং স্প্যানিশ কবিতা যতটা গুরুত্বলাভ করেছে, চীনা, জাপানি ও কোরিয়ান কবিতা ততটা গুরুত্বলাভ করেনি। মনোয়ারা ইলিয়াস সেই কাজটির সূচনা করেছেন।