
দাস প্রথা
দাস প্রথা মানুষের ইতিহাসে এক কলঙ্কতিলক। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা এই পরিচয় ছাপিয়ে মানুষ মানুষকে পণ্য বানিয়েছে। শক্তিশালী মানুষেরা দুর্বল মানুষকে দাস হতে বাধ্য করেছে। বাধ্য করেছে শক্তিবলে, প্রতিপত্তিবলে। মানুষের প্রতিটি প্রাচীন সভ্যতার পরতে পরতে ছিল এর অস্তিত্ব। সেই সুপ্রাচীন গ্রীক সভ্যতা থেকে শুরু করে সর্বত্র। পৃথিবীর প্রতিটি সংস্কৃতিতে হয়েছিল এর বিস্তৃতি। পৃথিবীতে এমন কোন অঞ্চল নেই যেখানে দাস প্রথার লালন পালন হয়নি। সম্ভবত মানুষের এমন কোন দল নেই যাদের পূর্বপুরুষেরা কেউ কোন এক সময় দাস কিংবা দাসমালিক ছিলেন না। শুধু ব্যক্তি, শ্রেণী কিংবা গোষ্ঠী নয়, পুরো জাতিকে দাসত্ববরণে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটেছে কোথাও কোথাও। সে এক অবিশ্বাস্য ভয়াবহ অমানবিক চিত্র। এই চিত্রটিই পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন লেখক তাঁর ‘দাস প্রথা’ শীর্ষক এই গ্রন্থে। দাসত্ব ও দাস প্রথার সকল দিক ও নানা প্রেক্ষিত অতি সুনিপুণভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন এতে। দশ অধ্যায়ে বিভক্ত এই গ্রন্থের প্রতিটিতে তিনি ছেঁকে তুলেছেন সেসব। মানব সমাজ ও দাস প্রথা, প্রাচীন সমাজে দাস প্রথা, মধ্য ও আধুনিক যুগে দাস প্রথা, দাস বাণিজ্য, দাস প্রথার অর্থনীতি-রাষ্ট্রনীতি ও ফলাফল, দাস প্রথা ও ধর্ম, দাস মানুষের আত্মকথা, দাস বিদ্রোহ যুগে যুগে, দাস প্রথা বিলোপের আন্দোলন এবং দাস প্রথা ও বর্তমান বিশ্ব শীর্ষক প্রতিটি অধ্যায় এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আলোচনা। এই আলোচনায় তিনি অতীতের সীমানা পেরিয়ে বর্তমানকেও সামনে নিয়ে এসেছেন। বলেছেনÑদাস প্রথা কেবল অতীতের বিষয় নয়, বর্তমানেরও। বর্তমানের নব্য দাস প্রথার স্বরূপ তিনি উদঘাটন করেছেন তথ্য প্রমাণ দিয়ে। এই আলোচনাকে লেখক সমৃদ্ধ করেছেন প্রাসঙ্গিক চিত্র, মানচিত্র, আলোকচিত্র ও সারণির দ্বারা। এর শেষপ্রান্তে দাসত্ব ও দাস প্রথার সময়রেখার (ঞরসব খরহব) পরিবেশন এক মূল্যবান মাত্রা যোগ করেছে। বাংলা ভাষায় রচিত দাস প্রথার উপর প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ এটি। সেই সাথে এটি বাংলাদেশে প্রকাশিত এই বিষয়ের প্রথম গ্রন্থও। আর তাই “দাস প্রথা” একটি অনবদ্য প্রকাশনা।