দি আলটিমেট ক্রাইম
আর দশজন পুলিশ অফিসারের মতই সরদার মুহাম্মদ চৌধুরীর জীবনকথা তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারতো। কিন্তু না- সেভাবে তার জীবন কাহিনী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আড়ালে চাপা পড়ে যায়নি। তিনি মনে করেছেন কর্মজীবনে এমন কিছু দেখার সুযোগ তার হয়েছে, এমন সব ঘটনার নীরব সাক্ষী তিনি যে একটা পুস্তক রচনার জন্য তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি তার অবসর জীবনে সেসব কাহিনী, সেসব ঘটনার বিবরণ অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দি আল্টিমেট ক্রাইম’-এ লিপিবদ্ধ করেছেন। গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক জেনারেল আইউব খানের পতনের পর জেনারেল ইয়াহিয়া যখন ক্ষমতা দখল করেন তখন সরদার মুহাম্মদ চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসকের সদর দফতরে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসপি হিসেবে। সেখানে তিনি প্রথমে জেনারেল আতিক এবং পরে জেনারেল টিক্কা খানের কাছে নিয়মিত রাজনৈতিক ঘটনাবলীর গোয়েন্দা রিপোর্ট পেশ করতেন। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের পর রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসপি হিসেবে নিয়োগ দান করে তার ওপর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও প্রেসিডেন্ট হাউজের নিরাপত্তা বিধানের বাড়তি দায়িত্বটুকু প্রদান করা হয়। সেই সুবাদে তার পক্ষে ওই সময়ে পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণকারী মূল ব্যক্তি, তার সভাসদ ও পারিপার্শ্বিক ঘটনাবল িও ব্যক্তিদের সম্পর্কে ঘনিষ্ঠভাবে ওয়াকিবহাল হওয়ার সুযোগ ঘটে। পাকিস্তানে শঠতা, ষড়যন্ত্র ও একান্ত স্বার্থপরতার রাজনীতি সেই একাত্তর-বাহাত্তরেই শেষ হয়ে যায়নি। বাহাত্তর পরবর্তী ঘটনাবলীর বিবরণও ‘দি আল্টিমেট ক্রাইম’-এ রয়েছে। কিন্তু ৬৮০ পৃষ্ঠার বইটি থেকে মাত্র সাতান্ন পৃষ্ঠা, যেখানে মূলত বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যাপারে পাকিস্তানী শাসক শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গি, সত্তর-বাহাত্তর সময়কালে ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের চরিত্র ও জীবন-যাপনের ধারা প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় উঠে এসেছে, সেটুকুই এখানে অনুবাদ করা হয়েছে। অপরপক্ষ রচিত এ ধরনের স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থাদিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তথ্য উপাত্ত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে বাস্তবসম্মত ধারণা পেতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি।