
সমকালে শেখ মুজিবুর রহমান
ক্ষণজন্মা এক পুরুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরূপ বড়মাপের মানুষ যুগে যুগে আসে না, কয়েক শতাব্দীতে হয়তো একজন আসেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশাল হৃদয়ের মানুষ। মানুষ যত বিশাল মাপেরই হোক, ভুল-ত্রুটি তাঁর থাকবেই। তবুও তিনি ছিলেন অনেকের তুলনায় নানা কারণেই ব্যতিক্রম। প্রখ্যাত লেখক নিরঞ্জন মজুমদারের ভাষায়, ‘দেশে নেতা অনেকই জন্মান। কেউ ইতিহাসের একটি পঙতি, কেউ একটি পাতা, কেউ বা একটি অধ্যায়। কেউ আবার সমগ্র ইতিহাস।’ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ‘এই সমগ্র ইতিহাস’। সারা বাংলার ইতিহাস। এদেশের পলিমাটিতে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা একটি মানুষ ছিলেন তিনি। দিনে দিনে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও নেতা হিসেবে। তাঁর পরিকল্পনা, উদ্দীপনা আর অভীষ্ট পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় তিনি একটি ‘নন মার্শাল রেস’ হিসেবে বদনাম দেওয়া জাতিকে বিনা অস্ত্রে সাহসী এক মার্শাল রেসে পরিণত করে সংগ্রামে বিজয় অর্জন করে ঘরে ফিরেছেন সগৌরবে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব বাংলাদেশের সমাজজীবনকে সুদীর্ঘকাল ধরে গভীরভাবে প্রভাবিত করে আসছে। এদেশের রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া প্রধান প্রধান বিষয়-বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন ছাত্র আন্দোলন, ৬-দফা ও ১১-দফার আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, অতঃপর সফল পরিণতি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার অনুরোধ করে বঙ্গবন্ধু সংবাদ পাঠিয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর কাছে। ভিন্ন দল ও এবং সমালোচনা করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন নেতাদের নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর খুবই প্রিয়ভাজন। প্রকৃতপক্ষে মওলানা ভাসানীর গড়ে তোলা তীব্র আন্দোলনের ফলেই বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মোট ৩৫ জন আসামির মুক্তিলাভ সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা কারও পক্ষেই সম্ভব হবে না। যাঁরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন তাঁরা ভাগ্যবান আর যাঁরা কোনো না কোনোভাবে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা ইতিহাসের অংশ, তাঁরা সৌভাগ্যবান। কৌতূহলী পাঠকের ঔসুক্য নিরসনের জন্য নিঃসন্দেহে আরও একটি উৎস হতে পারে ‘সমকালে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০-১৯৭৫ ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে মুক্তি সংগ্রাম’ গ্রন্থটি।