ইজম : চিত্রকলা সাহিত্য সংগীতে
সুদূর আদিমকালে, যখন মানুষ শিক্ষিত ও সভ্য হয়ে ওঠেনি, তখনও মানুষের মধ্যে শিল্পতৃষ্ণা ছিল। এই গুণ হয়তো মানবের সহজাত বৈশিষ্ট্যই। গুহাগাত্রে আবিষ্কৃত মনোরম শিল্পকর্ম সেই সাক্ষ্যই দেয়। ক্রমে ক্রমে মানুষ সভ্য হয়েছে, আলোকিত হয়েছে শিক্ষায়। কালের বিবর্তনে শিল্পচর্চা পেয়েছে নানা মাত্রিকতা, বিচ্ছুরণ ঘটেছে শিল্পী মানুষের প্রতিভা। বহু বহু শতকের যে শিল্প ইতিহাস, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসমৃদ্ধ শিল্পচর্চা, তার মধ্যে আমরা পরিচিত হই অনেক বাঁকবদল, রোমাঞ্চকর ও অভিনব সব নিরীক্ষা ও রীতি প্রকরণের সঙ্গে। এইসব পরিবর্তনের অভিঘাত শিল্পের পাটাতনে আছড়ে পড়েছে বারবার। শিল্প আন্দোলনের উন্মেষকাল থেকে শুরু করে আজ অব্দি বিশ্বজুড়ে যেসব ধারা বা ইজম প্রবর্তিত ও চর্চিত হয়েছে, তা নানাভাবে ঋদ্ধ করেছে শিল্প অভিযানকে। এসবের প্রত্যক্ষ প্রভাব, পরম্পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশিষ্ট চারুশিল্পী সৈয়দ লুৎফুল হক এই গ্রন্থে শিল্প, সংগীত ও সাহিত্যে নানা ইজমের প্রভাব প্রতিফলনের ইতি-নেতির নানা দিক খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। বাংলাদেশে তো বটেই, গোটা বাংলা সাহিত্যেই এ ধরনের বই ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায় না। সেদিক দিয়ে এই শিল্পী-লেখকের পরিশ্রমসাধ্য কাজের অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেই হয়। শিল্পী, শিক্ষার্থী শুধু নয়, শিল্পবোদ্ধা তথা মনষ্ক পাঠকের মনোজগৎকে আলোকিত সমৃদ্ধ করবে এই গ্রন্থ। বিভিন্ন ধরনের ইজম সম্পর্কে আমরা যা জানি, তা গভীর নয়, ভাসাভাসা। নানা ধরনের ইজম বিশ্বশিল্পকলা, বিশ্বসংগীত ও বিশ্বসাহিত্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কীভাবে কতটা সম্পৃক্ত হয়েছে তার মর্মোদ্ধার করবে এই গ্রন্থ পাঠের আনন্দময় অভিজ্ঞতা। -হাসান হাফিজ