শতাব্দীর সাথে সাতচল্লিশ বছর: মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের আত্মকথা
মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত একটি সুপরিচিত নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের মেধাবী ছাত্র। চাকরি জীবনে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে দক্ষ অফিসার, এবং পরবর্তীকালে নিজের যোগ্যতায় সি, এস, পি ক্যাডারে উন্নীত। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের দীর্ঘকালীন সংগ্রামের ফলে প্রথমে পাকিস্তান সরকারের অরাজনৈতিক কৃষি মন্ত্রী, পরে বাণিজ্য মন্ত্রী এবং তার পরে পূর্ভ পাকিস্তান সরকারের অর্থমন্ত্রী। ১৯৬৫ সালে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ত্যাগের পরে শেষ জীবন চুড়াশি বছর পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশের বহু উন্নয়ন-ধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা অথবা বিকাশে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, কর্তব্য-নিষ্ঠা ও উন্নয়নমুখী সমাজপ্রেমের দ্বারা সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন কাজে অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন যা পরিচিত মহলে কিংবদন্তীর মতো শোনা যায়। বইটি জনাব হাফিজুর রহমানের জন্ম থেকে পাকিস্তানের জন্ম পর্যন্ত এই সাতচল্লিশ বছরব্যাপী তাঁর জীবনের এক অসামান্য সাক্ষাৎকারভিত্তিক রূপায়ণ। এতে রয়েছে তাঁর সময়কার গ্রামের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থার চিত্র। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সে-সময়কার মানুষের পারস্পরিক প্রয়োজনে পরস্পরকে সাহায্য করবার সংস্কৃতি, দরিদ্র ছাত্রদের শিক্ষঅয় আপন-জনের মতো সাহায্য করবার সংস্কৃতি, যে সংস্কৃতির ফলে হাফিজুর রহমানের নিজেরও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্ভব হয়েছিল। সমাজের কাছে এই ঋণ হাফিজুর রহমানও শোধ করবার প্রয়াস পেয়েছিলেন আত্মীয়স্বজনদের শিক্ষায় সহায়তা করে শুধু নয়, চাকরিজীবনে শহরে-গ্রামে নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে অজস্র সমাজসেবা ও সমাজগঠনমূলক কর্মকাণ্ড করে যার কিছু পরিচয় ও বর্ণনা এই সাক্ষাৎকারে রয়েছে। এদেশের উন্নয়ন যে শুধু সরকারী প্রচেষ্টায় হবার নয়, সরকারের ভিতরে ও বাইরে এরকম সমাজসেবক ব্যক্তিদের মহান উদ্যোগের এবং পারস্পরিক সহযোগিতার যে একান্ত প্রয়োজন তার উত্তম বিবরণী হল এই আত্মজীবনী। গ্রন্থটিতে এদেশের গত শতাব্দীর সাতচল্লিশ বছরের অর্থনৈতিক সমাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের পরিচয় ও তার গতিময়তার কিছু আলেখ্য বিধৃত হয়েছে।