বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র : রাজনীতিকীকরণ ও দলীয়করণের আবর্তে
বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র তো ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ-ভারতীয় ও পাকিস্তানি শাসনযন্ত্রের উত্তরসূরি সংগঠন। ইংরেজদের প্রবর্তিত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) আর পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি)-এর ধারাবাহিকতায় তাদেরই আদলে, গড়নে ও বৈশিষ্ট্যে গড়া। ইংরেজ আর পাকিস্তানিরা এদেশ ছেড়েছে সেই কবে, কিন্তু রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই দেশের উপযোগী গণমুখিন সেবাধর্মী আমলা সংগঠনের বিকাশ সুদূরপরাহতই থেকেছে। উপরন্তু পূর্বসূরিদের ভালো গুণগুলো বিসর্জিত হয়েছে আর খারাপ অনেক বিষয় এতে যোগ হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এমন একটি শাসনযন্ত্রের নানারকম বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। অ্যাডহকইজম আর সুবিধাবাদী সিদ্ধান্তের কারণে অনবরত অঘটন ঘটেছে। এর কাক্সিক্ষত বিকাশ রুদ্ধ হয়েছে। ঘটনার পালাক্রমে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এক সময় আবির্ভাব ঘটেছে স্বার্থান্বেষী দলবাজ, মতলববাজ আমলাগোষ্ঠীর। সংখ্যায় তারা অল্প, মেধায় তারা পিছিয়ে, কিন্তু ক্ষমতায় তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। রাজনৈতিক শক্তির নিকটজন তারা। আমলামহলের সবকিছু যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে। রাজনীতিকরা ভাবেন-এরা তাদের নিজের লোক। এরাই তাদের ক্ষমতার সৌরশক্তি। এ কেমন শাসনযন্ত্র? যে যন্ত্রের প্রমত্ত শক্তি উপেক্ষা করে গণমানুষের অধিকার, কল্যাণ-প্রায় সবকিছু। এ কেমন যন্ত্র যাতে কেবল বহির্মহলের লোকেরাই নয়, নিষ্পেষিত হয় এর অন্দরমহলের বাসিন্দাগণও? লাঞ্ছনার নানান রঙে রঞ্জিত হয় তাদের অবয়ব। এই দৃশ্যপট, এই চালচিত্র দলীয়করণ আর রাজনীতিকীকরণের দুষ্টচক্রে বন্দি হওয়া বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের ইতিহাস পরিক্রমায় উপস্থাপিত আমাদের সকলের জানা কাহিনী, কিন্তু অনেকটাই অ-দেখা, না-বলা বিষাদসিন্ধু!!