আধুনিক বাংলা কবিতা নিয়ে এদেশে বিস্তর লেখালেখি হলেও আশির দশকের শুরুতে তিরিশ দশকীয় এই কবিতাধারার বিপরীতে দাঁড়ান প্রায় একাই, শনাক্ত করেন প্রথা ও প্রচলিত (তাঁর ভাষায় পুরনো) কবিতার মৌল প্রবণতাসমূহ, এমনকি প্রথাবিরোধী নতুন কবিতার ভাষা ও প্রকরণের আভাস তিনিই দেন বিভিন্ন সময়ে রচিত তাঁর গদ্যে, প্রবন্ধে।
আজ অব্দি যে সব গদ্য বা প্রবন্ধ তিনি লিখেছেন তা থেকে নির্বাচিত লেখাগুলো নিয়েই এ বই।
কবিতার ভাষা, প্রকরণ ও নন্দনতত্ত্ব নিয়ে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ কেবল নয়, বাংলা কবিতার ছন্দ নিয়েও এ গ্রন্থে রয়েছে কবি ও কবিতা পাঠকদের জন্য অপরিহার্য এক রচনা। শুধু তাই নয়, জীবনানন্দ দাশের একটিমাত্র কবিতা ‘বনলতা সেন’ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে আধুনিক বাংলা কবিতাকে-তা নিয়েও রয়েছে এক অশ্রুতপূর্ব পর্যবেক্ষণ।
প্রথাবিরোধী ও নিরীক্ষাপ্রবণ এই কবির প্রতিটি গদ্যে, এমনকি গ্রন্থালোচনায়ও বিবৃত হয়েছে কবিতার শৈল্পিক সৌকর্য, ভাষা ও প্রকরণের বহুবিচিত্র উপাদানসমূহ। যে কারণে তাঁর প্রতিটি রচনাই জন্ম দেয় নতুন চিন্তা ও উপলব্ধির-যা প্রথা ও প্রথাবিরোধী সকল কবি ও কবিতাপাঠকের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
Farid Kabir / ফরিদ কবির
ফরিদ কবির প্রচলিত কবিতা রচনার মাধ্যমে যাত্রা করলেও প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হৃদপিণ্ডে রক্তপাত’ প্রকাশের পরই আমূল পাল্টে ফেলেন নিজের কবিতার ভাষা ও প্রকরণ। যে কারণে পরবর্তীকালে; তাঁর কবিতা আর থাকেনি প্রচল-অনুসারী, ক্রমাগত নিরীক্ষায় তিনি বাংলা কবিতাকে নিয়ে যান এক নতুন গন্তব্যের দিকে, যে কবিতার ভাষা একান্ত তাঁরই।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি প্রায় একাই বাংলা কবিতাশরীরে যোগ করেন নতুন ডিকশন। প্রচলিত ও প্রথা-কবিতার বদলে কবিতার জন্য সৃষ্টি করেন নতুন রাস্তা।
যে-কোনো রচনায় বরাবর প্রথাবিরোধী এই কবি-লেখকের জন্ম ঢাকায়, ১৯৫৯ সালের ২২ জানুয়ারিতে। বড় হয়েছেন পুরোনো ঢাকার জিন্দাবাহারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ফরিদ কবির মাস্টার্সে পড়লেও পরীক্ষা দেননি। মুদ্রণ ব্যবসা দিয়ে জীবিকা শুরু করলেও পেশা বদল করেছেন বারবার। মুদ্রণ ব্যবসা ছেড়ে চাকরি করেছেন ব্যাংকে, সেটা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন সাংবাদিকতায়; কাজ করেছেন আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও আমাদের সময়-এ। আর, এখন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিতে। এ ছাড়াও, তিনি সম্পাদনা করেছেন মাসিক ‘নতুনধারা’ ও সাপ্তাহিক ‘কাগজ’।
ফরিদ কবির-এর অন্যান্য বই
কবিতা
হৃদপিণ্ডে রক্তপাত [মুক্তধারা ১৯৮৫], ওড়ে ঘুম ওড়ে গাঙচিল [পল্লব পাবলিশার্স ১৯৮৮], অনন্ত দরোজাগুচ্ছ [অনন্যা ১৯৯১], মন্ত্র [অন্যপ্রকাশ ১৯৯৯], ওঁ প্রকৃতি ওঁ প্রেম [ আগামী ২০১০], ফরিদ কবিরের নির্বাচিত কবিতা [অন্যপ্রকাশ ২০০৩, অঙ্কুর ২০০৭], প্রেমের কবিতা [বিদ্যাপ্রকাশ ২০০৯], আমার কবিতা [অনন্যা, ২০১২]
প্রবন্ধ
পুরোনো ও নতুন কবিতা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ [অন্যপ্রকাশ ২০০৩]
সম্পাদনা
নির্বাচিত কবিতা [সিনোরিনা ১৯৮৪] ,পঞ্চাশ বছরের প্রেমের কবিতা [মুক্তধারা ১৯৮৬], কবিদের লেখা প্রেমের গল্প [কাকলী ১৯৮৭, অন্যপ্রকাশ ১৯৯৯], দুই বাংলার কবিতা [পল্লব পাবলিশার্স ১৯৮৭], একুশের কবিতা [অনন্যা ১৯৯১], একুশের গল্প [অনন্যা ১৯৯১], হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ [অনুপম প্রকাশনী ১৯৯২], দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ গল্প [শিখা প্রকাশনী ১৯৯২], স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি [মাওলা ব্রাদার্স ১৯৯৪], দুই বাংলার ৫০ বছরের প্রেমের কবিতা [অন্যপ্রকাশ ১৯৯৮]
অনুবাদ
বাংলাদেশ : একটি রক্তাক্ত দলিল [বন্ধু ১৯৮৭, হাওলাদার প্রকাশনী, ২০১৫], মুক্তিযদ্ধের ঘাতক [পল্লব পাবলিশার্স ১৯৮৯]
নিবন্ধ
স্বাস্থ্যসেবা ও নৈতিকতা [আবিষ্কার, ২০১৩], (অধ্যাপক এ কে আজাদ খান-এর সঙ্গে যৌথভাবে)