রৌদ্র এবং জলের পিপাসা
কবিতায় গল্প বলার রেওয়াজ বাংলা সাহিত্যে নতুন নয়। আখ্যান কাব্য, কাব্যকাহিনী,... গীতিকা বা এ ধরনের নানা নামেই লেখা হয়েছে গল্প। কবিতায় নাটক বা উপন্যাস লেখার ঐতিহ্য রয়েছে বাংলা সাহিত্যে। নিকট অতীত এবং হাল আমলেও এ ধরনের রচনা চোখে পড়ে। তবে কবিতা দিয়ে গল্পের চারিত্র্য নির্মাণের কথা খুব একটা শোনা যায় না। আগাগোড়াই কবিতা, কিন্তু কবিতার প্রাধান্য না থেকে হয়ে উঠেছে গল্প। বিষয়, প্রকাশভঙ্গি, নানা ছন্দের উপস্থিতিতে কবিতার মেজাজ যেমন অক্ষুণ্ন আছে, ঘটনার বিন্যাস, চরিত্রের ঘাতপ্রতিঘাতে গল্পের আবহও রয়েছে অটুট। ফারুক মাহমুদ এ ধরনের রচনাকে বলেছেন ‘কাব্যগল্প’। এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে তিনটি কাব্যগল্প। দুটি ছাপা হয়েছিল ২০০৯ সালে সাপ্তাহিক ২০০০ এবং পাক্ষিক অন্যদিন পত্রিকার ঈদসংখ্যায়। অন্যটি ছাপা হয় সকালের খবর ঈদসংখ্যায় ২০১১ সালে। তিনটি লেখার মধ্যে একটি অন্তঃস্রোত শনাক্ত করা যাবে। এরপরও চরিত্রের দিক থেকে প্রতিটি লেখাই সার্বভৌম। গ্রাম যেমন আছে, আছে শহরের আবহ। দ্বন্দ্বসঙ্কুল মনোবৈপরীত্য, নাগরিক ও সময়যন্ত্রণার নানা অনুষঙ্গ, প্রাত্যহিকতার টানাপোড়েন, শরীরচেতনা, রতিদর্শন ইত্যাদি বিষয় এসেছে ছন্দের ঠাস বুনটে। একটি রচনায় উপস্থিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। বর্তমানের ভেতর থেকে ওঠা চিরায়তের সাক্ষাৎ মিলবে গল্পের নানা ভাঁজে। কাব্যগল্পগুলোর কোনো কোনো অংশ সহজেই পেতে পারে স্বতন্ত্র কবিতার মর্যাদা। এরপরও সামষ্টিক অর্থে রৌদ্র এবং জলের পিপাসা কবিতায়-গল্প-বলা অর্থাৎ ‘কাব্যগল্প’ই হয়ে উঠেছে।