খুনি ও বুদ্ধিজীবী
গোটা আটেক গল্প নিয়ে কবির চান্দের এই ছোটগল্প সংগ্রহটি। পাঠকের কাছে নামটা তেমন চেনা লাগবে না। কোথাও তাঁর গল্প এর আগে প্রকাশিত হয়েছে কি না আমি জানি না। হয়ে থাকতেও পারে। তবে আমি এই বইয়ের গল্প দু’একটি আগে পড়েছি পাণ্ডুলিপি অবস্থায়। বিক্ষিপ্তভাবে একটি দুটি লেখা পড়লে মনে একটা দাগ পড়তেই পারে, না পড়তেও পারে। দাগটা হাল্কাভাবে পড়লে তার রং চেনা যায় না। একসময় তা সম্পূর্ণ মুছে যেতেও পারে। তবে মুছে যাক আর না যাক, সেই চিহ্ন ধরে কোথাও পৌঁছনো যায় না। কবিরের যে দু’একটি গল্প আগে পাণ্ডুলিপিতে পড়েছিলাম, তার দাগ কিন্তু মুছে যায়নি। তবে স্বীকার করতে হবে, সেগুলি মিলেমিশে কোনো একটা সম্পূর্ণ ছবি তৈরি হয়েও ওঠেনি। এটা এখন হয়েছে, আটটা গল্প একসাথে পড়ে একটা স্পষ্ট চৌহদ্দি-টানা ছবি পাওয়া যাচ্ছে। বহুরকম সম্পর্ক, আন্তঃসম্পর্ক জুড়ে-জুড়ে কবিরের গল্পের একটা স্বভূমি তৈরি হয়েছে। কবিরকে সদ্য কলম-ধরা নতুন লেখক মনে হবে না। তাঁর লেখায় বুদ্ধি-আবেগ যেমন পরিমিত, কলমও তেমনি স্বচ্ছন্দ। বিষয়ও তেমনি নির্দিষ্ট। বিষয় আর কি? দুর্গত মানুষ, দুর্গত সমাজ, দুর্গত দেশ, দুর্গত দুনিয়া। রাষ্ট্র আছে, স্বাধীনতা আছে, সার্বভৌমত্ব আছে, পণ্য আছে। আছে, আছে, সব আছে। তারপরেই নেই। নেই, নেই, কিছুই নেই। সিনেমাপরিচালক বাবা দুর্ধর্ষ একটি ‘সীন’ (?) তৈরি করার জন্য জবাই-করা মানুষের গলার ঘড়ঘড় আওয়াজ শুনতে চায়, ফিনকি-ওঠা রক্ত দেখতে চায়। পেশাদার খুনি তার কলেজে পড়া ছেলেকেই জবাই করে সেই শব্দ শোনাচ্ছে পিতাকে। লম্পট রাজাকারের শিকার গৃহবধূটি দেহ খুলতে খুলতেই শিখে নিচ্ছে রিভলবার চালানো আর রাজাকারের রিভলবার দিয়েই মাথার খুলিটি উড়িয়ে দিচ্ছে তার। ওর ছিটকে পড়া মগজটাও গ্রহণ করবে না বাংলাদেশের মাটি। এরকম সব গল্প। বেদনায় আর্দ্র, ক্ষোভের আগুনে গনগনে। শিল্পের কথা? বলতে পারব না, বলতে চাইও না। ওটা মোটামুটি অকহতব্য, মানে বলা উচিত নয়, বলা সম্ভবও নয়। হাসান আজিজুল হক