Image Description

শকুন্তলা

৳100
Format Hardcover
Year 2009
Language Bangla
ISBN 9789842003184
Edition 1st
Pages 64

শকুন্তলার অবলম্বিত রস যেমন মধুর, তেমনি এর ভাষা মাধুর্য ও প্রসাদগুণ-ম-িত। সংস্কৃত নাটকের ঐতিহ্য অনুসরণ করে কালিদাস যেখানে নারীচরিত্রের ও নিম্নশ্রেণির চরিত্রের মুখে প্রাকৃত ভাষা ব্যবহার করেছেন, বিদ্যাসাগর সেখানে একান্তই মৌখিক ভাষা প্রয়োগ করেছেন। গৌতমী ও শকুন্তলার এবং ধীবর ও নগররক্ষীর কথোপকনে তার পরিচয় আছে। এমনকী, দুষ্মন্ত ও মাধব্যের কথোপকথনে তৎসম শব্দ ব্যবহার করেও ভাষার একটা হালকা চাল বজায় রেখেছেন। ভাষার এই বৈচিত্র্য পাঠকের পক্ষে বিশেষ উপভোগ্য হয়েছে।

মূল নাটকের মতো বিদ্যাসাগরের শকুন্তলাও মিলনান্ত। কিন্তু বিদ্যাসাগরের রূপান্তর পড়ে পাঠকের ধারণা হয় যে, নারীদুঃখকাতর যে-বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ প্রচলেনর জন্যে এবং বহুবিবাহ রহিত করার জন্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আন্দোলন করেছিলেন, সেই বিদ্যাসাগরই আরো ভাগ্যহতা নারীর আলেখ্যরচনায় এখানে প্রবৃত্ত হয়েছেন। যে-নারী জন্মসময়ে জননী কর্তৃক পরিত্যক্তা এবং গর্ভবতী অবস্থায় স্বামী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাতা, নিজের অদৃষ্টকে ছাড়া আর কাউকে যে নিজের মন্দভাগ্যের জন্যে দায়ী করতে পারে না, শকুন্তলা তেমন নারীর বৃত্তান্ত। বিদ্যাসাগর-রচিত এর পরবর্তী আখ্যান সীতার বনবাস (১৮৬০) পাঠ করলে এই ধারণা দৃঢ় হয়। অনুবাদকর্মের মধ্যেও মৌলিক ¯্রষ্টা কেমনভাবে আত্মপ্রকাশ করেন, শকুন্তলা তার এক অসামান্য নিদর্শন। বর্তমান মুদ্রণে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস-সম্পাদিত বিদ্যাসাগর-স্মৃতি-সংরক্ষণ-সমিতির পক্ষে রঞ্জন পাব্লিশিং হাউস-প্রকাশিত বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলীর (১৩৪৪) পাঠ অনুসৃত হয়েছে।

আনিসুজ্জামান
জানুয়ারি ২০০৯

সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের একটি সিরিজ প্রকাশনা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আখ্যায়িকার শুরু, এ-কথা বলা যায়। ১৮৫৪ সালে তিনি কবি কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের উপাখ্যানভাগ বাংলায় পরিবেশন করেন। এরপর প্রায় শতবর্ষ ধরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে-বিকাশ তার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থগুলোকে পাঠকের কাছে একত্রে তুলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সিরিজটি পরিকল্পিত হয়েছে।

সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালার ২৪টি বই একসঙ্গে পাওয়া অত্যন্ত খুশির বিষয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আগামীতেও এরকম কিছু গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারবো বলে আমরা আশা রাখি।

Iswar Chandra Vidyasagar / ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

সমাজ সংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, দয়াদাক্ষিণ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (১৮২০-৯১) অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা মনে রেখেও রবীন্দ্রনাথ বলেছিঠেন, ‘তাঁহার প্রধান কীর্তি ভঙ্গভাষা’। তিনিই বিদ্যাসাগরকে ‘বাংলাভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী’ বলে অভিহিত করে বাংলা গধ্যে তাঁর দানের বিস্তার পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। মূল হিন্দি অবলম্বনে বেতালপঞ্চবিংশতি (১৮৪৭) লিখে বাংলাসাহিত্যে বিদ্যভসাগরের যাত্রা শুরু। এরপর তাঁর অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্ম শকুন্তলা (১৮৫৪)-কালিদাসের 'অভিজ্ঞানশকুন্তল' নাটক এর অবলম্বন। তবে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত নাটককে বাংলায় আখ্যানের রূপ দিয়েছেন- মূলে সাতটি অঙ্ক অনুবাদে সাতটি পরিচ্ছেদের রূপ নিয়েছে। মূলে যা ক্রিয়ামূলক, অনুবাদে তা বিবৃতিমূলক, সংলাপ উভয়ই আছে। তবে তার চেয়েও বড়ো পরিবর্তন করেছেন রুচি ও বাস্তবতার বিবেচনায়।
কালিদাসের কালে রাজসভায় যে-আদিরসের জোগান সংগত এমনকী আবশ্যিক মনে হতো, উনিশ শতকের পাঠকসাধারণের জন্যে বিদ্যাসাগর তা রুচিকর বিবেচনা করেন নি। ফলে, মূলে যা প্রকট, তা কখনো আভাসে প্রকাশিত, কখনো বর্জিত। এইজন্যে সমালোচকেরা বলেন, কালিদাসের দুষ্মন্ত যেখানে কামুক, বিদ্যাসাগরের দুষ্মন্ত সেখানে প্রেমিক।

সংসারানভিজ্ঞা শকুন্তলার ব্রীড়াবনত ভাবটাও বাংলায় চমৎকার ফুঠে উঠেছে। কালিদাসের নাটকে বেশ কিছু অতিপ্রাকৃত উপাদান আছে। কাহিনির জন্যে যেটুকু অপরিহার্য-দুর্বাসার অভিশাপবৃত্তান্ত কিংবা দুষ্মন্ত কর্তৃক প্রত্যাখ্যাতা শকুন্তলাকে এক জ্যোতির্ময়ী পদার্থের আকাশপথে নিয়ে যাওয়া- সেটুকু ছাড়া আর সব অলৌকিকতাই বিদ্যাসাগর বর্জন করেছেন। পতিগৃহে যাত্রার সময়ে শকুন্তলা দেবদত্ত অলংকার লাভ করেছিলেন, সে-অংশটি বাদ দেওয়ায় সমকালীন সমালোচকেরা বিদ্যাসাগরের দোষ ধরেছিলেন। বিদ্যাসাগরের বাস্তবনিষ্ঠতার মর্ম তাঁরা বোঝেন নি।