কুলিমানুর ঘুম
‘এই নদী, মানুষ ডুবে মরার মতো নদী এ নয়, পরনের ধুতি বা লুঙ্গি কুচি করে উপরে না তুলে পার হওয়া যাবে এমন নদীও নয়, বর্ষায় জলোচ্ছ্বাস হলে দুকূল ছাপিয়ে মাঠে ক্ষেতে গিয়ে আছড়ে পড়বে, ছলাৎছলাৎ শব্দে ঘুমডোবা রাত্তিরে আচমকা কারও জেগে ওঠাকে চমকে দেবে এরকম কোনো নদী এটাকে বলা যাবে না। এখানে একটা অববাহিকা ছিল, এখানেই বালিচাপা পড়ে আছে কোনো রাজকীয় জনপদ, অথবা বালিগর্ভে ঢুকে আছে রণক্লান্ত ঢাল তলোয়ার, এরকম হদিস আপাতত কেউ দেয় নাই, দিতে পারবে বলেও মনে হয় না। শান্ত গম্ভীর অনেকটা ধ্যানমগ্ন এ নদী ধলাই। গোটা বিশেক যুৎসই বন্যা সে ঠিকই পয়দা করেছে, আশপাশের গাঁওগেরামের ফসল ক্ষেত রাস্তা বাড়ি ঘর ভাসিয়েও দিয়েছে কোনোবার। তারপরও খুব সাদামাটা বলা যায় তাকে। এরকম একটা সাদামাটা নদীর পাড় ঘেঁষে তারও চেয়ে সাদা এবং ফ্যাকাসে একটা জীবন নিয়ে দীন দুনিয়ার আড়ালে একদিন চলে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কুলিমানু।’ মণিপুরী জনপদের এক অদ্ভুত চরিত্র এই কুলিমানু, যে নির্দ্বিধায় কথা বলতে বলতে দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তাকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে এই উপন্যাস/উপন্যাসিকার কাহিনী। কুলিমানুর মধ্য দিয়ে দেখা যায় রক্ত-ঘাম-মাংসের এক বিপর্যস্ত জীবনের ছবি, সে ছবির মধ্য দিয়ে চেনা যায় প্রান্তবর্তী মানুষের রূপ-রেখা। উপর্যুপরি শ্লেষ আর বক্রোক্তির ভাঙাচোরা অলঙ্কারে বেজে ওঠে চিরন্তন কথার নতুনতর বয়ান।