নাটকসংগ্রহ ২
রবার্ট ফ্রস্ট যথার্থই বলেছেন, ঐতিহ্য হলো যুগ-যুগ ধরে বহুব্যবহৃত একজোড়া পাদুকা, যা আমাদের পূর্বপুরুষরা পায়ে দিয়ে স্বচ্ছন্দ হেঁটেছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে রেখে গেছেন। আমাদের কর্তব্য হলো ঐ পাদুকাজোড়া পায়ে দিয়ে আবার এগিয়ে যাওয়া। এই পায়ে দিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা হতে হবে স্বচ্ছন্দ, গতিময়, অর্থবহ। আর সেটি করতে হলে প্রয়োজন ব্যক্তিক মেধা বা “ইনডিভিজুয়াল ট্যালেন্ট”। সাইমন-এর ব্যক্তিক মেধা সাইমনকে সহজেই আমাদের পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যের পাদুকায় পা প্রবেশ করাতে এবং স্বচ্ছন্দ এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে নিঃসন্দেহে। ... সাইমন-এর অভিলাষ ও অভিযাত্রা বা ‘এ্যাপ্রোচ’ বিশাল। তিনি একাধারে বাঙালি ঐতিহ্যের সাথে সন্নিহিত এবং সেই একই সচেতনতা তাঁকে বিশ্বনাটকের কাছে টেনে নিয়ে যায় ফলে রচনা করেন বোধিদ্রুম, যুগান্তরো রূপালো নাচি, বিনোদিনী, সীতার অগ্নিপরীক্ষা, এবং এ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট। এই যে দেশজ ও বৈশ্বিক বিষয়বস্তুর প্রতি আকর্ষণ- তা সাইমন যেমন জন্মগতভাবে পেয়েছেনÑ যা সবাই পান না। বর্ণনাত্মক নাট্যরীতির সাথে সংলাপাত্মক নাট্যরীতির সমন্বয় ঘটাতে সাইমন তাঁর এই “নাটকসংগ্রহ” গ্রন্থের আটটি নাটকের কোনোটিতেই অঙ্ক ও দৃশ্য বিভাজন করেন নি এবং ফলে তিনি তাঁর বর্ণনাত্মক ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রেখেছেন। এমন কি এও লক্ষ্য করা যায়- তিনি অনেক ক্ষেত্রেই কে কোন সংলাপ উচ্চারণ করবেÑ তার সঠিক অনুক্রম রচনা করেন নি, যার ফলশ্রুতিতে নাট্যনির্দেশকÑ আমার মতেÑ যথেষ্ট স্বাধীনতা পেয়ে যান নাটকের নবতর কোনো ব্যাখ্যা প্রদানে। এটি অবশ্যই অভিনব যদিও চারিত্রিক দিক দিয়ে এই বিষয়টি “নভেল”, “এপিক” বা “ভার্স ন্যারেটিভ”Ñ যা অনেক ক্ষেত্রেই ব্রেখটীয় নাট্যতত্ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে রাখা প্রয়োজন সাইমন-এর ধহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মরপধষ ধঢ়ঢ়ৎড়ধপয বা আত্ম-পরিচয় অনুসন্ধানের প্রচেষ্টায় বা বাঙালি জাতিসত্ত্বার পরিচয় উদ্ঘাটনের মাধ্যম হিশেবে এই নাট্যরীতি সম্পূর্ণ সফলভাবে ব্যবহার্য বলে আমার মনে হয়। -অধ্যাপক আবদুস সেলিম