মহাবংস : খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে পালি ভাষায় রচিত ঐতিহাসিক পুঁথিকাব্য
আমাদের ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়-সিংহল নামে রেখে গেছে নিজ শৌর্যের পরিচয়। মহাবংস; পালি ভাষায় রচিত খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর এক কালজয়ী ঐতিহাসিক কাব্য। সিংহলী বৌদ্ধ ভিক্ষু মহানাম এর কথিত রচয়িতা। সিংহল তথা শ্রীলংকার ইতিহাস গ্রন্থটির প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তু হলেও প্রসঙ্গক্রমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়/তথ্য উঠে এসেছে। গ্রন্থটি তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ আধার ও উৎস হিসেবে স্বীকৃত। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক পর্যন্ত প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস এ গ্রন্থে বিধৃত। এ গ্রন্থই প্রথম সাক্ষ্য দেয় : সিংহলের আদি পুরুষ বঙ্গবীর বিজয়সিংহের নামানুসারেই দেশটির নাম হয় ‘সিংহল’। বিজয়ের মাধ্যমেই সিংহল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিদেশীয় আত্মিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং মৈত্রীবন্ধন গড়ে উঠেছিল। সিংহলী ও বাঙালির নৃতাত্ত্বিক সাদৃশ্যও উপর্যুক্ত যোগসূত্রের সত্যতা প্রতিপন্ন করে। ধ্র“পদী আদি কবি মহানাম ঐতিহাসিক ঘটনাবলী সংগ্রহ করে ছন্দের ঝংকারে বিকীর্ণ করেছেন এই দ্বীপের ইতিহাস এবং সেই ইতিহাস সমসাময়িককালের প্রচলিত বৌদ্ধধর্ম সংশ্লিষ্ট পৌরাণিক কাহিনী, রূপকথা, গল্প, জনশ্র“তি, আখ্যান প্রভৃতি, যা অতিরঞ্জিত ভাবকল্পনায় প্রদুষ্ট হলেও সত্যবর্জিত নয়। কবির ভাব-কল্পনার ঐশ্বর্র্যে ও আতিশয্যে তা বরং ইতিহাসের স্তরে উন্নীত হয়ে কালের ঐতিহ্যকে বহন করছে যুগ যুগ। দিলীপ কুমার বড়ুয়া ও মৈত্রী তালুকদারের যত্ন ও দীর্ঘদিনের পরিশ্রমলব্ধ এই অমূল্য ও ঐতিহাসিক পুঁথিকাব্য মহাবংস-এর সার্থক ভাষান্তর এক ঐতিহাসিক গুরুদায়িত্ব পালনের নিদর্শনস্বরূপ।