ডানের শত্রু সত্য বামের শত্রু সত্য: সত্যের মিত্র কে?
লেখা নানা প্রকারের হয়, হয়ে থাকে। হতে পারে লেখায় আড়ম্বর থাকবে বেশি, বিষয়বস্তু কম; আবার এমনও ঘটা সম্ভব যে বিষয়বস্তুর ঘাটতি থাকবে না, কিন্তু দুর্বল হবে প্রকাশের ভঙ্গি। আরেফীনের লেখার এই দুই ঝুঁকির কোনোটিই নেই। তার রচনা বিষয়ের দিক থেকে অত্যন্ত ভরপুর এবং একই সঙ্গে উপস্থাপনায় সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী। এই সংকলনের রচনাগুলোতে দেখি আগের তুলনায় আরেফীনের রাগ ও ক্ষোভ দুটোই বেড়েছে। তার কারণ আছে। যে বিশ্বকে তিনি প্রতিনিয়ত দেখছেন এবং যাকে দেখতে দেখতে লিখছেন, তার কর্মকাণ্ড ক্রমাগত নোংরা ও অসহ্য হয়ে উঠছে। পেছনের কারণটা অন্যকিছু নয়। সেটা হচ্ছে একদিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভেতরকার সংকট এবং অন্যদিকে তার আগ্রাসী থাবার সম্প্রসারণ। পুঁজিবাদ এখন আর রাখঢাকের অবশ্যকতা দেখে না। সরাসরি এবং অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে যেখানে সেখানে হামলা চালায়। তার অশ্লীল ও রক্তাক্ত হস্তক্ষেপ থেকে কোনো কিছুই নিরাপদ নয় - না মানুষের চিত্তভূমি না তার বাসভূমি। জর্জ বুশ হচ্ছেন পুঁজিবাদের বর্তমান বাস্তবতার সবচেয়ে আস্থাভাজন ও সর্বরূপে যথার্থ প্রতিনিধি। যদিও ব্যক্তি হিসাবে তার আচার আচরণ খুবই নিম্নমানের; বোধ করি নিম্নমানের বলেই তিনি অমন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত। পুঁজিবাদ এখন উঁচুতে উঠছে কিন্তু তার নৈতিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মান যে কোন স্তরে নেমে গেছে জর্জ বুশের হাতে পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্রের ক্ষমতা অর্পণ তার অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য নিরিখ বটে। যে প্রশ্নটি শোরোনামে রয়েছে সেটির জবাবও এই বইতে পাওয়া যাবে। প্রশ্নটি হলো, ‘সত্যের মিত্র কে?’। জবাব হচ্ছে সত্যের মিত্র হলো পুঁজিবাদবিরোধী বিশ্ব। সেই মিত্রদেরকে সাহায্য করাটাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মিত্রদের একজন হয়ে রুখে দাঁদানো। এই কথাটিও বইতে রয়েছে। নানাভাবে, বিভিন্ন প্রসঙ্গে, কিন্তু অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে। আর সেটি আছে বলেই এ বই বিশেষভাবে মূল্যবান। কেবল অন্ধকারটাই সত্য নয়, যারা আলো হাতে এগিয়ে আসছেন তারাই বরঞ্চ অধিকতর মূল্যবান।